ওয়েব থ্রি কি সেটা হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন। তবে যেগুলো জানেন না সেগুলোই আজকের ভিডিওতে বলবো। দেখুন ওয়েব থ্রি নিয়ে জ্যাক ডরসে এবং এলন মাস্ক খুবই সন্দেহপ্রবণ। কেন?
এলন মাস্ক টুইট করেছিলেন যে, “ওয়েব থ্রি কি কেউ দেখেছেন? আমি তো এখনও পর্যন্ত খুঁজেই পেলাম না।” মাস্ক আরও বলছেন, “আমি মনে করি না যে, ওয়েব থ্রি বাস্তব এবং মার্কেটিং দুনিয়ায় এর কোনও অস্তিত্ব থাকতে পারে। কেবল মাত্র একটা গুঞ্জন সৃষ্টি করেই এই ওয়েব থ্রি নিয়ে বেশি মাতামাতি করা হচ্ছে।” মানে তার মতে এটা শুধু মাত্র একটা মার্কেটিং বাজওয়ার্ড!
এদিকে আবার জ্যাক ডরসে মনে করেন যে, সাধারণ মানুষ ইন্টারনেটের মালিক হতে পারবেন না বরং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা হবেন। একটি টুইটে জ্যাক ডরসে বলেছিলেন, “ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের ইনসেনটিভ ছাপিয়ে যেতে পারবে না ওয়েব থ্রি এবং এর ফলে তাঁরাই সবথেকে বেশি লাভবান হবেন। এটি আসলে একটি ভিন্ন ধরনের কেন্দ্রীভূত সত্ত্বা হতে চলেছে। এখন মানুষকেই ঠিক করে নিতে হবে, তাঁরা কোনটা বেছে নেবেন।”
আমরা যে যে ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি এখন, সেই পদ্ধতি কি ওয়েব থ্রি জন্য বদলে যাবে?
শুরুতেই যাঁদের কাছে ওয়েব থ্রি আসবে, তাঁদের কাছে আগামী প্রজন্মের এই ইন্টারনেট ইউটোপিয়ান বলেও মনে হতে পারে। ইউটোপিয়া শব্দ দ্বারা মূলত বোঝায় কল্পলৌকিক আদর্শ স্থান। খুব সহজ করে বলতে গেলে, আপনি এখন যেমন ইন্টারনেটে যা কিছু করতে যাবেন, তাতেই গুগলের শরণাপন্ন হতে হয় বা বলা যায় বিভিন্ন ধরনের সার্চ ইঞ্জিনের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। ওয়েব থ্রির ক্ষেত্রে এমন কিছু হবে না। ব্লকচেইন নিয়ে এখন অনেক কথা শোনা গেলেও তা পুরোপুরি আসতে দেরি আছে। ওয়েব থ্রি আসলে সব দিক থেকে ওয়েব টু-র মতোই হবে। তবে মালিকানা তুলে দেওয়া হবে ইউজারের হাতেই।
ওয়েব থ্রি ঠিক কী ভাবে কাজ করবে এটা এই ভিডিওতে আমরা খুব একটা আলোচনা করবো না?
ইথেরিয়ামের তত্ত্ব অনুযায়ী, ওয়েবথ্রি আসলে এমনই একটি নেটওয়ার্ক হতে চলেছে যা চালাতে কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই এবং যে কোনও সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবে। আপনার সার্ভিসের জন্য কারও অনুমতি বা কারও অ্যাকসেস দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অন্য কোনও টোকেনের মাধ্যমে ব্লকচেইন ব্যবহার করে পেমেন্ট করা যাবে।
বোঝার সুবিধার্তে ওয়েব থ্রি কী সেটা কিছুটা বলি?
১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) লঞ্চ করেছিলেন টিম বার্নার্স-লি। যদিও সেটিকে ওয়েব ওয়ান বলা হত না। তবে তা মানুষকে অনলাইনে থাকতে দিত। তার ঠিক পরের প্রজন্ম হল ওয়েব টু (Web 2)। ১৯৯৯ সালে লঞ্চ হওয়া এই আধুনিক প্রজন্মের ইন্টারনেটকে বইয়ের ভাষায় ওয়েব টু না বলা হলেও ইন্টারনেটের ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে বদলে দিয়েছিল। ২০১৪ সালে গেভিন উড ওয়েব থ্রি-র ধারণা নিয়ে আসেন। প্রসঙ্গত ইথেরিয়ামের উদ্ভাবক হিসেবে গেভিন উডের নামই উঠে আসে। ওয়েব থ্রি-র মূল ধারণাটি হল ইন্টারনেটকে সম্পূর্ণ রূপে বিকেন্দ্রীকরণ করা বা ডিসেন্ট্রালাইজ করা। ব্লকচেইনের উপরে ভিত্তি করে ইন্টারনেটের বিকেন্দ্রীকরণের অর্থই হল, ইউজারদের হাতে ‘মালিকানা’তুলে দেওয়া।
Web 1.0 হচ্ছে “read-only Web,” যেখানে Web 2.0 হচ্ছে “participative social Web,” অর্থাৎ read, write Web and Web 3.0 হলো”read, write, execute Web.”
এই যে ওয়েব থ্রি নিয়ে মার্কেটে যে সব ধারণা ও মতবাদ এখনও পর্যন্ত ঘোরাফেরা করছে, তার সব কিছুই কতটা বাস্তবায়িত হতে পারে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান বিশেষজ্ঞ মহল। কিন্তু ১৯৯২ পর কখনও কী ভেবে দেখেছিলেন যে, একটা মুঠোফোনই আপনার জীবনের সব কাজ করে ফেলতে পারে। সেই সম্ভাবনার কথা তখন কেউ বললে আপনি হেসে উড়িয়ে দিতেন! কে বলতে পারে, ওয়েব থ্রি-র ক্ষেত্রেও তো এমনটা হতে পারে।