আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আজ, শুরু করছি আমাদের ফিউচার প্লেলিস্টের ১ম পর্ব। বিষয় হলোগ্রাম। সেই ১৯২০ থেকে আজ ২০২৩ কি কি করেছে এই প্রযুক্তি আর ভবিষ্যতে আরো কি কি করবে সমস্ত কিছু জানতে শেষ অব্দি সাথেই থাকুন।
উৎপত্তিঃ
হলোগ্রাম শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ Holos এবং Graphe থেকে। যেখানে Holos অর্থ পুরোটা এবং Graphe অর্থ লেখা বা অঙ্কন।
সংজ্ঞাঃ
আমরা সাধারনত ক্যামেরায় যেসব ছবি দেখে থাকি সেগুলো 2D হয়ে থাকে অর্থাৎ দৈর্ঘ এবং প্রস্থ। যাকে ফটোগ্রাফিক বলে। কোন বস্তুর গভীরতা নির্ণয়ে আমাদের চোখের দুটি পয়েন্ট অফ ভিউ দরকার হয়, যা থেকে তৈরি হয় ত্রিমাত্রিক বা 3D ছবি। হলোগ্রাফি প্রযুক্তির মাধ্যমে যখন আমরা কোন 3D ছবি তৈরি করি সেটাই হলোগ্রাম।
ইতিহাসঃ
1920 সালে বিজ্ঞানী Mieczyslaw Wolfke এবং 1939 সালে উইলিয়াম লরেন্স ব্র্যাগ সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা এক্স-রে মাইক্রোস্কোপির যে কাজগুল পূর্বে হয়েছিল সেগুলোর উপর ভিত্তি করে হাঙ্গেরিয়ান-ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী ডেনিস গাবর (হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়: Gábor Dénes) ১৯৪৭ সালে হলোগ্রাম আবিষ্কার করেন। তবে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে পুরোপুরি ত্রিমাত্রিক রূপ দেওয়া যায়নি তাঁর বানানো হলোগ্রামে । পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে বিজ্ঞানী Theodore Maiman লেজার প্রযুক্তি আবিস্কার করেন, যা হলোগ্রাফির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞনী ডেনিশ গাবর “হলোগ্রাফিক পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং বিকাশের জন্য” 1971 সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
কার্যপদ্ধতিঃ
হলোগ্রাম তৈরির জন্য প্রথমেই দরকার হবে একটি বস্তু যার হলোগ্রাম বানানো হবে। এরপর একটি লেজার বীমের মাধ্যমে বস্তুটি এবং এর মাধ্যমের উপর লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করা হয়। আর সবকিছু ঠিকঠাকমতো ধারন করতে দরকার হয় একটি রেকর্ডিং মিডিয়ার। রেকর্ডিং মিডিয়া একই সাথে ছবিটি আরও স্পষ্ট করে তোলে। প্রথমেই লেজার একটি লেজার বীমকে দুইটি লেজার বীমে রূপান্তর করা হয় এবং একটি আয়নার মাধ্যমে চালিত করা হয়। এর মধ্যে একটি বীম লক্ষ্যবস্তুর গায়ে নিক্ষেপ করা হয়। আর দ্বিতীয় বীমটি নিক্ষেপ করা হয় রেকর্ডিং মিডিয়ামের উপর। এর মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর একটি ক্লিয়ার ছবি ধারন করা হয়। দুইটি লেজার বীম পরবর্তীতে পুনরায় একে অপরের সাথে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। এর এমনভাবে তারা বাঁধাপ্রাপ্ত হয় যেন সেটি আমাদের সামনে লক্ষ্যবস্তুর একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে ধরে। এভাবেই একটি 3D/ ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাম তৈরি করা হয়।
হলোগ্রামের প্রকারভেদঃ
- বিভিন্ন ধরনের হলোগ্রাম আমরা দেখতে পাই যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- রিফ্লেকশন হলোগ্রাম
- ট্রান্সমিশন হলোগ্রাম
- এছাড়াও আছেঃ
- হাইব্রিড হলোগ্রাম
- এমবসড হলোগ্রাম
- ইন্টিগ্রাল হলোগ্রাম
- হলোগ্রাফিক ইন্টারফেরোমেট্টি
- মাল্টিচ্যানেল হলোগ্রাম
- কম্পিউটার দ্বারা তৈরি হলোগ্রাম
একটা প্রশ্ন আপনার মনে আসতে পারে “হলোগ্রাম কী শুধু 3D থাকবে নাকি 4D তেও সম্ভব” !?
এখনো পর্যন্ত হলোগ্রাম 3D তেই তৈরি হয়েছে। যদি সময়কে আমরা মাত্রা হিসেবে কখনো আনতে পারি সেক্ষেত্রে 4D বা চতুর্থ মাত্রিক ছবি তৈরি করা সম্ভব।
হলোগ্রাম কী বাস্তব নাকি কাল্পনিক !?
হ্যা! হলোগ্রাম বাস্তব। তবে সায়েন্স ফিকশন (সাই-ফাই) মুভিতে দেখানো যে “হলোগ্রাম” আমরা দেখি সেগুলোর বাস্তবতা নেই।
এবার হলোগ্রামের বাস্তব কিছু প্রয়োগের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করিঃ
- নাসাকে তো আমরা কম বেশি সবাইই চিনি। তো নাসা করেছে কি!! তাদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একজন ফ্লাইট সার্জন জোসেফ স্মিড কে রেখেছে। সে সেখানে না যেয়েই তার হলোগ্রাম পাঠিয়েছিলো, ক্রুদের সাথে কথা বলেছিলো, চারপাশে তাকিয়েছিল এবং এমনকি হাত কাঁপানোর ছবিও তৈরি করেছিলো
- কোনো জটিল জিনিষের গঠন যেমন কোন সেতু বা উড়োজাহাজের পাখায় অত ধিক টান চাপ বা পীড়নের কি ধরনের প্রভাব পড়ছে তা জানার জন্যও হলোগ্রাফি ব্যাবহার করা হচ্ছে ।
- তাছাড়াও চিকিৎসাক্ষেত্রে রয়েছে হলগ্রামের গুরুত্বপূর্ন অবদান। দেহের অভ্যন্তরীন বা বাইরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন বা টিস্যর অবস্থা ত্রিমাত্রিক ভিউয়ে দেখা যাবে। চিকিৎসকেরা রোগের ধরন বা রোগীর জখম নির্নয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করতে পারবেন।
- ব্যক্তিগত তথ্য, মেডিকেল রেকর্ড বা অর্থ বিষয়ক তথ্য যে কোন গোপন তথ্যই হোক না কেনো হলোগ্রামের সাহায্যে তাকে নিরাপদে তাকে করে রাখা যেতে পারে।
web 3.0 is fake জেনে নিন!
হলোগ্রাম কী এআই ?
এক কথায় বললে উওর হবে না। তবে এই প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে এআই এর ব্যবহার করা যেতেই পারে।
হলোগ্রাম নিয়ে কথা আজকে এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আবার কথা হবে ভিন্ন কোন টপিক নিয়ে ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকবেন সবাই আল্লাহ হাফিজ।